তড়িৎ বর্তনি কি

 তড়িৎ বর্তনি এখানে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ(I) প্রবাহিত হয়ে রোধ (R) এর মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আবার ব্যাটারিতে ফেরত আসবে।এইযে বিদ্যুৎ প্রবাহের একটা সার্কেল এটাই হলো বর্তনি। Advertisement একটি বৈদ্যুতিক বর্তনি বা ইলেকট্রনিক সার্কিটের উপাদানগুলি বিভিন্নভাবে সংযুক্ত…

Advertisement

 তড়িৎ বর্তনি

এখানে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ(I) প্রবাহিত হয়ে রোধ (R) এর মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আবার ব্যাটারিতে ফেরত আসবে।এইযে বিদ্যুৎ প্রবাহের একটা সার্কেল এটাই হলো বর্তনি।

Advertisement
একটি বৈদ্যুতিক বর্তনি বা ইলেকট্রনিক সার্কিটের উপাদানগুলি বিভিন্নভাবে সংযুক্ত করা যায়। এই সংযুক্ত করার সবচেয়ে সহজ দুটি উপায় হচ্ছে সিরিজ বা শ্রেণি বর্তনী এবং অপরটি সমান্তরাল বর্তনী।

বর্তনি-কি

Advertisement

শ্রেণি বর্তনি

যখন কোন বর্তনিতে তার উপাদান গুলো একই পথে যুক্ত থাকে অর্থাৎ একটির শেষ প্রান্তের সাথে অপরটির প্রথম প্রান্ত যুক্ত থাকে তখন তাকে শ্রেণি বর্তনী বলে এবং এক্ষেত্রে বর্তনীর সকল উপাদানের মধ্যে দিয়ে একই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।

শ্রেণি বর্তনি

এই সার্কিটির দিকে আমরা লক্ষ করি। এখানে রোধ দেখা যাচ্ছে তিনটা। এখানে আমার তড়িৎ প্রবাহ কিন্তু কোথাও ভাগ হচ্ছে না। অর্থাৎ এখানে বর্তনিটির উপাদান গুলো সিরিজে যুক্ত থাকে।
যেমন ধর (R1)এ একটি লাইট লাগালাম (R2)তে একটি ফ্যান লাগালাম (R3)তে আবার একটি লাইট লাগালাম । এভাবে সবগুলো এক লাইনে থাকার কারণে তড়িৎ প্রবাহ কোথাও ভাগ হচ্ছে না।

Advertisement

সমান্তরাল বর্তনি

অপরদিকে যখন কোন বর্তনীতে সবগুলো রোধের প্রথম প্রান্ত একটিমাত্র সাধারণ বিন্দুতে এবং অপরপ্রান্ত অপর একটিমাত্র সাধারণ বিন্দুতে যুক্ত থাকে তখন সে বর্তনীকে বলা হয় সমান্তরাল বর্তনী।এখন দেখা যাক সমান্তরাল বর্তনি কেমন হবে।

সমান্তরাল-বর্তনি

 এই সার্কিটটির দিকে লক্ষ করি। এখানেও দেখা যাচ্ছে তিনটা রোধ আছে। বর্তনিতে বিদ্যুৎ(I) প্রবাহিত হয়ে একটা নির্দিষ্ট অংশে এসে তড়িৎ প্রবাহটা (I1)(I2)(I3)তিনটা অংশে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এবার অন্য অংশে এসে (I1)(I2)(I3) এ তিনটি অংশ মিলিত হয়ে (I) হয়ে ফেরত আসলো।
সুতরাং শ্রেনি বর্তনি এবং সমান্তরাল বর্তনি চেনার একটি সহজ পদ্ধতি এটাই যে যদি বর্তনিতে তড়িৎ ভাগ না হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সেটা শ্রেনি বর্তনি আর বর্তনিতে তড়িৎ যদি ভাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সেটা সমান্তরাল বর্তনি।

শ্রেণি বর্তনীর সুবিধা:

শ্রেণি-বর্তনি
শ্রেণি বর্তনি

শ্রেণি বর্তনিতে একটাই সুইচ দিতে পারবে। এ একটা সুইচ অফ করলে সব অফ হয়ে যাবে। আবার চালু করলে আবার সব চালু হয়ে যাবে। তার মানে এটাকে একটা দিয়েই নিয়ন্ত্রন করা যায়।

সমান্তরাল বর্তনী সুবিধা:

সমান্তরাল-বর্তনি
সমান্তরাল বর্তনি

ধর এখানে প্রথমে একটা লাইট দিলাম তারপর একটা ফ্যান দিলাম তারপর আবার একটা লাইট দিলাম। শুধুমাত্র তিনটার সাথে তিনটা সুইচ বসিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যাবে।

*পরিক্ষায় আসতে পারে:

অনেক সময় তোমাদের পরিক্ষায় প্রশ্ন আসে যে আমরা আমাদের বাসা বাড়িতে কোন বর্তনি ব্যবহার করতে পারি? আমরা সমান্তরাল বর্তনি ব্যবহার করবো নাকি শ্রেনি বর্তনি ব্যবহার করবো? এক্ষেত্রে আমাদের উত্তর হবে আমরা সমান্তরাল বর্তনি ব্যবহার করবো। কারন ধরো তুমি যে ঘরে থাকো সে ঘরে একটা সুইচ বেড রুমে আছে, একটা সুইচ বাথরুমে আছে, একটা সুইচ ডাইনিং এ আছে। এভাবে আলাদা আলাদা ভাবে যেখানে যেভাবে প্রয়োজন আমি সেখানে সেভাবে সেট করেছি। এখন আমি বেড রুমে আছি অন্য লাইট গুলো বন্ধ করতে চাই। বা আমার রুমে লাইট জ্বলছে আমি চাচ্ছি ফেনটা অফ করে দিতে। আবার চাচ্ছি লাইট টা বন্ধ থাক শুধূ ফ্যান টা চলুক। এতে ইচ্ছা মত আমি সুবিধা পাবো সমান্তরাল বর্তনিতে।
এজন্যই শ্রেণি অপেক্ষা সমান্তরাল বর্তনি বাসা বাড়িতে বেশি উপকার।

বর্তনিতে রোধের ব্যবহার:

এখন এইযে বর্তনিতে (R1) (R2) (R3)রোধ গুলো দেখা যাচ্ছে এই রোধ গুলোর কাজ কি? এগুলো কেন ব্যবহার হয়?
কারন আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তাতো আসে মেন লাইন থেকে। এ মেন লাইনের বিদ্যুতে অনেক ভোল্টের বিদ্যুৎ থাকে। এখন আমাদের যে লাইন আছে যে সুইচ আছে সেগুলোর এতো পরিমান বিদ্যুৎ সহ্য করার ক্ষমতা রাখেনা। এখন এতো পরিমান বিদ্যুৎকে বাধা প্রাপ্ত করার জন্যই রোধ ব্যবহার হয়। যাতে আমাদের প্রয়োজনিয় বিদ্যুতটা আমরা পাই। যদি রোধ না থাকে তো দেখা যাবে অতিরিক্ত বিদ্যুতের কারণে সার্কিট পুরে যাবে।

শ্রেণি ও সমান্তরাল এক সাথে:

একটি বর্তনিতে শ্রেণি ও সমান্তরাল উভয়টি পাওয়া যেতে পারে। নিচের চিত্রটি লক্ষ কর-

শ্রেণি-ও-সমান্তরাল-বর্তনি
শ্রেণি বর্তনি ও সমান্তরাল বর্তনি এক সাথে

এখানে সার্কিটটিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) (R1) এবং (R2)পর্যন্ত প্রবাহিত হয় কোনো রকম ভাগ হওয়া ছাড়াই। তারপর দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) ভাগ হয়ে (I1)(I2) হয়ে (R3) এবং (R4) এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর (I1)(I2) এ দুটি অংশ মিলিত হয়ে (I) হয়ে ফেরত আসলো।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যেহেতু (R1) এবং (R2) তে কোনো রকম বিদ্যুৎ ভাগ হচ্ছে না তাই বলা যায় এটি শ্রেণি বর্তনি আর (R3) এবং (R4) অংশে যেহেতু বিদ্যুৎ ভাগ হচ্ছে তাই এটি সমান্তরাল বর্তনি।

তুল্যরোধ:

তুল্যরোধ বলতে যা বোঝায় তা হলঃ একটি বর্তনীতে যতগুলো রোধক আছে, ততগুলো রোধকের পরিবর্তে একটা রোধক ব্যবহার করতে হবে কিন্তু বিভব পার্থক্যের কোন পরিবর্তন ঘটানো যাবে না এবং ওই রোধকগুলো তড়িৎ প্রবাহকে যতটুকু বাধা প্রদান করত; তার পরিবর্তে একটি রোধক ব্যবহার করলে ঠিক সেই পরিমাণ বাধা দান করবে; তাহলেই নতুন একমাত্র রোধকটি হবে ওইসব রোধক গুলোর তুল্যরোধ।

রোধ

এই বর্তনিটিতে ৩টি রোধ আছে। এখন আমার ইচ্ছা আমি ৩টি রোধ ব্যবহার এর পরিবর্তে শুধু একটি রোধ ব্যবহার করবো। এমন একটি রোধ ব্যবহার করবো যেটা একাই তিনটার কাজ করবে। তাহলে বিভিন্ন পরিমান রোধের পরিবর্তে আমরা যদি একটা রোধ দিয়ে সেই রোধ গুলোর কাজ করতে পারি তাকে বলা হয় তুল্যরোধ।

শ্রেণি বর্তনির তুল্যরোধ:

Rs=R1+R2+R3……+Rn এখানে n সংখ্যাক রোধ শুধু যোগ করে দিলেই হবে।

বর্তনি

যেমন ধরো এই শ্রেণি বর্তনিতে তিনটা রোধ। সুতরাং
Rs=R1+R2+R3
বা Rs=5+5+10
বা Rs=20 Ω
এখন আমার ইচ্ছা এই তিনটি রোধের পরিবর্তে একটি রোধ ব্যবহার করবো। এবং সেটার মান কত হবে?
20 মানের রোধ।

তাহলে আমার এই বর্তনি একই রকম কাজ করবে। এটাকেই বলা হয় তুল্যরোধ। এই ছিলো শ্রেণি বর্তনির ক্ষেত্রে।
সমান্তরাল বর্তনির তুল্যরোধ: সূত্র 1/Rp=1/R1+1/R2+1/R3……+1/Rn এখন এখানে আমাদের দরকার Rp এর মান। 1/Rp এর মান নয়।

বর্তনি

ধরো এই সমান্তরাল বর্তনিতে দুইটা রোধ আছে। সুতরাং
1/Rp=1/R1+1/R2
বা 1/Rp=1/5+1/10
বা 1/Rp=(2+1)/10
বা 1/Rp=3/10
এখন এখানে আমাদের দরকার Rp এর মান। 1/Rp এর মান নয়। সুতরাং 1/Rp এর মান উল্টে দেই। তাহলে কি হয়? Rp=10/3
Rp=3.33
1/Rp সূত্রে থাকলেও এটা কিন্তু আমাদের রোধ না। আমাদের রোধ হলো Rp

বর্তনি

সুতরাং আমরা দুইটা রোধের পরিবর্তে একটা 3.33 রোধ ব্যবহার করবো। তাহলে আমার এই বর্তনি একই রকম কাজ করবো।

এটাই হচ্ছে এ অধ্যায়ের বেসিক ধারনা। নিয়মিত এমন কোর্স পেতে এখনি নিচের বক্সে ইমেইল এড্রেস লিখে, সাইন আপ করুন।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *