দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কাকে বলে

আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের মূলভিত্তি হলো দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বা Double Entry System। জানুন দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি এবং এরে বৈশিষ্ঠ্য।

Advertisement

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি হলো একটি ধারনা। এই টিউটোরিয়ালে আমরা শিখব,

  • দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলতে কি বোঝায়?
  • কেন দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির ব্যবহার?
  • দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ঠ।
  • হিসাবের শ্রেণিবিভাগ
  • কিভাবে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করা হয়?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলতে বুঝায়, প্রতিটি লেনদেনকে দুটি পক্ষে বা দুতরফাভাবে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা।

আমরা জানি, এক হাতে তালি বাজেনা। ঠিক তেমনি, একটি পক্ষ দ্বারা লেনদেন সম্ভব নয়। লেনদেন হতে হলে এক পক্ষ সুবিধা প্রদানকারী ও অন্য পক্ষ সুবিধা গ্রহনকারী থাকে। এই ধারণা থেকেই দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনকে দুটি পক্ষে বা দুটি হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

Advertisement

এক্ষেত্রে, সুবিধা গ্রহনকারী হিসাবকে (গ্রহীতা) ডেবিট ও সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে (দাতা) ক্রেডিট হিসেবে, হিসাবের বিভিন্ন বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি

উল্লেখ্য, এখানে ডেবিট ও ক্রেডিট কি তা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। হিসাববিজ্ঞানে ডেবিট (Debit) ও ক্রেডিট(Credit) হলো একটি প্রতীক, যার কোন বিশেষ অর্থ নেই। সুবিধা গ্রহণকারীকে ডেবিট প্রতীক ও সুবিধা প্রদানকারীকে ক্রেডিট প্রতীক দ্বারা চিহ্নিত করে হিসাবের বিভিন্ন বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

ধরে নাও, তুমি তোমার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, কিরনকে ৫,০০০ টাকা বেতন হিসেবে প্রদান করেছ। এ ঘটনাটি বিশ্লেষন করেলে তুমি খেয়াল করবে, ১। বেতন হিসেবে দিলাম ৫,০০০ টাকা। ২। আমার ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা কমে গেলো ৫,০০০ টাকা।

Advertisement

তাহলে নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারছো যে এখানে ২টি হিসাব বা পক্ষ প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে।

এখন এই লেনদেনটি হিসাবে লিখতে হলে এভাবে লিখব।

বেতন হিসাব …………… (ডেবিট) ৫,০০০ টাকা
নগদান হিসাব ………….. (ক্রেডিট) ৫,০০০ টাকা।

Advertisement

আশা করি বুঝতে পেরেছ যে, দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি, কেন দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যবহার হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ঠ্য

  • ২টি পক্ষ থাকবে।
  • এক পক্ষ (সুবিধা গ্রহণকারী) ডেবিট ও অন্য পক্ষ (সুবিধা প্রদানকারী) ক্রেডিট
  • উভয় পক্ষ, সমপরিমান অর্থ দ্বারা প্রভাবিত হবে

এখন তোমার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে আমরা বুঝব যে, কোন কোন হিসাবটি লেনদেনের পক্ষ হবে বা কিভাবে পক্ষগুলো চিনতে পারব। এজন্য, হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসাব সমীকরণের ধারণা প্রয়োগ করে লেনদেনের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করতে হবে।

হিসাব সমীকরণ

হিসাব সমীকরণ নিয়ে এর পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে পড়তে পারো, হিসাব সমীকরণ কি

আমরা জানি, প্রতিটি জিনিসেরই একটি প্রকৃতি বা বৈশিষ্ঠ থাকে, যেমন আমরা চা বা কফির কথা বলতে পারি, এটির প্রকৃতি কি? এটি গরম, আইসক্রীমের প্রকৃতি কি? এটি ঠান্ডা, কলম? এটি একটি কঠিন পদার্থ, পানি? এটি তরল পদার্থ। ঠিক তেমনি, লেনদেনের প্রতিটি হিসাব বা পক্ষ একটি শ্রেণির অর্ন্তভূক্ত। এবং প্রত্যেকটি শ্রেণির একটি প্রকৃতি আছে।

আগেই আমরা জেনেছি যে, একটি লেনদেনে ২ টি হিসাব/পক্ষ থাকে। এ হিসাবগুলোকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় যা আমরা হিসাব সমীকরণে দেখেছি।

হিসাব সমীকরণে আমরা ৫টি উপাদান খেয়াল করি সম্পদ = দায় + ( মালিকানা স্বত্ব + আয় – ব্যয় )

এই ৫টি উপাদানই হচ্ছে লেনদেনের হিসাবসমূহের শ্রেণি। লেনদেনের প্রতিটি হিসাবই উপরের কোনও না কোন শ্রেণির হবে। যেহেতু একটি লেনদেনে ২টি হিসাব/পক্ষ রয়েছে, প্রতিটি লেনদেন অবশ্যই এই ৫টি উপাদানের যেকোনা ২ টিকে প্রভাবিত করবে।

দুতরফা-দাখিলা-পদ্ধতি-কি

ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়

হিসাব সমীকরণে দুটি পাশ রয়েছে, যেমন, এখানে বাম পাশকে ডেবিট ও ডান পাশকে ক্রেডিট ধরা হয়। উপরের ছবিতে লক্ষ্য করলে আমরা সহজেই ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের কৌশল আয়ত্ত্ব করতে পারব।

এখানে, লক্ষ্য করি,

  • সম্পদের স্বাভাবিক প্রকৃতি হচ্ছে ডেবিট, তাই এটি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, আর হ্রাস পেলে ক্রেডিট।
  • দায়ের স্বাভাবিক প্রকৃতি হচ্ছে ক্রেডিট, তাই এটি বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট, আর হ্রাস পেলে ডেবিট।
  • মালিকানা স্বত্বের স্বাভাবিক প্রকৃতি হচ্ছে ক্রেডিট, তাই এটি বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট, আর হ্রাস পেলে ডেবিট।
  • আয়ের স্বাভাবিক প্রকৃতি হচ্ছে ক্রেডিট, তাই এটি বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট, আর হ্রাস পেলে ডেবিট।
  • ব্যয়ের স্বাভাবিক প্রকৃতি হচ্ছে ডেবিট, তাই এটি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, আর হ্রাস পেলে ক্রেডিট।
ডেবিট-ক্রেডিট-নির্নয়

আমরা লক্ষ্য করি, ব্যয় সমীকরণের ডান পাশে অথচ এটি কেন ক্রেডিট হলোনা। যদিও ব্যয় ডান পাশে, এর সামনে বিযোগ চিহ্ন, অর্থাৎ এটি সমীকরণের ডান পাশ থেকে বিযোগ হচ্ছে। তাই এটিকে আমরা বিপরীত ভাবে চিহ্নিত করি।

তাহলে, আমরা কি পেলাম?

সম্পদ ও ব্যয় = ডেবিট;
দায়/আয়/মালিকানা স্বত্ব = ক্রেডিট

এবার নিচের ছকের মত করে, নিজে নিজে বাসায় চর্চা কর। কোন সমস্যা বা প্রশ্ন থাকলে, কমেন্ট করতে পার।

আরও পড়ুন: জাবেদা শেখার সহজ উপায়

FAQ’s

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির উদ্ভব হয় কত সালে?

১৪৯৪ সালে ইতালীর প্রসিদ্ধ গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি (Luca Pacioli) আর্থিক ঘটনাবলি সঠিক ও সুচারুভাবে লিপিবদ্ধ করার দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির উদ্ভব করেন।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা কোনটি?

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হচ্ছে গাণিতিক শুদ্ধতা প্রমাণ। এর সাহায্যে সহজেই হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *